দরজাটা বন্ধ করে দাও, প্রফেসর ইস্টউড বললেন। কেউ শুনে ফেলতে পারে।
দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসে কিশোর আর রবিনের পাশে বসল মুসা।
ডেস্কের ওপাশ থেকে পুরো ঘরে চোখ বোলালেন প্রফেসর, যেন ভয়, দেয়ালগুলোরও কান আছে। কান অনেকগুলো আছে দেয়ালে, তবে ওগুলো বধির এখন, শোনে না। বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানীকে ঘিরে রেখেছে অসংখ্য মৃত জীবের লাশ, স্টাফ করা, দেয়ালে গাঁথা তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চমৎকারভাবে। ঘরের মেঝে থেকে ছাত পর্যন্ত তাক, সব বোঝাই। উত্তর সমুদ্রের পাখি অ্যাক, পেঙ্গুইন, টার্ন, সামুদ্রিক চাঁদ মাছ, ময়ূর মাছ, সাগর-কই, টিউনা, মুলেট, ঋষি কাঁকড়া, জেলিফিশ, পুফার, পোয়পোয়েজ, শজারু মাছ আর আরও নানারকম সামুদ্রিক প্রাণী।
সাগরের প্রাণীর ওপর গবেষণা করছেন ডক্টর এথনি ইস্টউড। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক ইন্সটিটিউটের নির্বাহী সচিব। সাগর চেনেন তিনি। সাগরের মাছ চেনেন। আমেরিকা, ইংল্যাণ্ড, নরওয়ের বড় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা অনেক কাজ আদায় করে নিয়েছে তাঁর কাছ থেকে, কিছু বিনে পয়সায়, কিছু টাকার বিনিময়ে, মূল্যবান তথ্য কিনে নিয়েছে। তাদের দেয়া সেই টাকাতেই পুরানো বিশাল এই প্রাসাদটা কিনে মস্ত ল্যাবরেটরি বানিয়ে নিয়েছেন। প্রায়, প্রতিটি ঘরেই নানা আকারের নানা ধরনের ট্যাংক রয়েছে, ওগুলো নানা রকম মাছের আঁতুড় ঘর।
মাথা সামান্য নোয়ালেন ধূসর-চুল প্রফেসর, যাতে ট্রাইফোকাল লেন্সের ভেতর। দিয়ে ভালমত দেখতে পারেন কিশোর অতিথিদের।
আমান বলল, প্রশান্ত মহাসাগরে নাকি বেড়াতে যাচ্ছ তোমরা, হাসলেন প্রফেসর। কিছু সামুদ্রিক জীব ধরারও চেষ্টা করবে। খুব কঠিন আর বিপজ্জনক কাজ। বয়েস কম তোমাদের। পারবে?
পারব, স্যার, গভীর আত্মবিশ্বাস ফুটে বেরোলো কিশোরের কণ্ঠে। আমাজানের জঙ্গলে গিয়ে ভয়ঙ্কর অ্যানাকোণ্ডা আর মারাত্মক হিংস্র জাগুয়ার ধরে এনেছি এই আমরা তিনজন। ভীষণ অরণ্যে সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনী সংক্ষেপে তাঁকে বলল সে।
বেশ, চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন প্রফেসর। আমানকে আমি বহু বছর ধরে চিনি। তার ওপর আস্থা আছে আমার। তোমাদের কথা বলেছে আমাকে। বয়েস এত কম হবে ভাবিনি…্যাকগে, সে যখন বলেছে, ঠিকই বলেছে। ফিল্ম ডিরেক্টর ডেভিস ক্রিস্টোফারকে ফোন করেছিলাম, সে-ও শতমুখে প্রশংসা করল তোমাদের। ওর মত লোককে অবিশ্বাস করতে পারি না। শোন, হাইলি কনফিডেনশিয়াল একটা ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করব এখন। ডেনজারাস! দুবার মরতে মরতে বেঁচেছি এর জন্যে। তিনবার আমার এই ঘরে হানা দিয়েছে চোর, ফাইলপত্র তছনছ করেছে, রাতের বেলা। খুঁজে পায়নি অবশ্য, কারণ কোন কাগজে লিখিনি ওই তথ্য, লেখা আছে এখানে, নিজের কপালে টোকা দিলেন তিনি।
তোমাদের জানাব সেকথা, বললেন তিনি। জানলেই বিপদ, জীবন বিপন্ন হবার ভয় আছে। যতক্ষণ না জানছ, ভাল আছ। সে-তথ্যের জন্যে হয়ত অত্যাচার করে তিলে তিলে মারা হবে তোমাদের। ভেবে দেখ এখন, ঝুঁকি নেবে কিনা? একে একে তিনজনের মুখের দিকে তাকালেন প্রফেসর।
আড়চোখে একবার দুই বন্ধুর মুখের দিকে তাকাল গোয়েন্দাপ্রদান। রবিন স্তব্ধ, মুসার চেহারা ফ্যাকাসে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল কিশোর। শান্তকণ্ঠে বলল, সব খুলে বলুন।
দীর্ঘ এক মুহূর্ত কিশোরের চোখে চোখে তাকিয়ে রইলেন প্রফেসর। তারপর হাসি ফুটল মুখে। নাহ, আণ্ডার এস্টিমেট করেছিলাম তোমাদের, কম বয়েসী বলে ভুল করেছি। আমান আর ক্রিস্টোফার ঠিকই বলেছে। মনে হচ্ছে পারবে তোমরা। ডেস্কের ড্রয়ার থেকে একটা ম্যাপ বের করে টেবিলে বিছালেন তিনি। মেরুদণ্ডে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল কিশোরের। জলদস্যুর গুপ্তধন? সাগরের কোন দুর্গম এলাকায় সেই ধন নিয়ে ডুবে গেছে কোন স্প্যানিশ জাহাজ? ম্যাপটা কি তারই নকশা?
সামনে ঝুঁকে ম্যাপটা দেখল সে। ও, না, নকশা নয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক কোম্পানির করা একটা ম্যাপ, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের, হাওয়াই থেকে তাইওয়ান পর্যন্ত আঁকা রয়েছে। ম্যাপটা বেশ বড় আর আধুনিক, ছোট ছোট অসংখ্য দ্বীপ দেখানো রয়েছে, যেগুলো সাধারণ ম্যাপে থাকে না।
চেয়ার থেকে কিছুটা উঠে রবিনও দেখল। কয়েকটা দ্বীপের নাম জানে, হাওয়াই, তাহিতি, সামোয়া, ফিজি। বেশির ভাগই জানে না, বিশেষ করে লাল পেন্সিল দিয়ে গোল দাগ দেয়াগুলো, প্রফেসর দিয়েছেন। যেমন, পোনাপে,ট্রাক, ইয়্যাপ, ওলোল, লোস্যাপ, প্যাকিন, পিনজিল্যাপ। অদ্ভুত আরও কিছু নাম রয়েছে, কতগুলোর নাম উচ্চারণ করাই কঠিন।
কয়েকটা দ্বীপ ঘিরে রয়েছে গোল একটি মাত্র দাগ। সেটাতে পেন্সিল ঠকে প্রফেসর বললেন, এই যে জায়গাটা, একে বলে প্রশান্ত মহাসাগরের অন্ধ অঞ্চল। এখানে রয়েছে পঁচিশ হাজারের মত প্রায় অচেনা দ্বীপ। জাপানীরা দখল করে রেখেছিল এগুলো, বহুবছর বাইরের কোন জাহাজকেই ঘেঁষতে দেয়নি এই এলাকায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এগুলোর হাতে গোনা কয়েকটা দ্বীপে লড়াই হয়েছিল ওদের, মিত্রবাহিনীর সঙ্গে। জাপান হেরে যায়। দ্বীপগুলো দেখাশোনার ভার এখন আমেরিকার ওপর। কয়েকটা দ্বীপে আমেরিকান নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপিত হয়েছে। হারানো পৃথিবীই বলা চলে অঞ্চলটাকে।
তবে ওই হারানো পৃথিবীই আমার জন্যে স্বর্গ, তোমাদের জন্যেও হবে, কারণ, দুর্লভ জলজ জীব ধরতে যাচ্ছ তোমরা। আমার কাছে প্রিয় হবার আরেকটা বড় কারণ, ওখানেই রয়েছে আমার মুক্তার খামার।
মুক্তা! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
আস্তে বল, চট করে ঘরের চারপাশে চোখ বোলালেন প্রফেসর, কেউ শুনে ফেলল কিনা দেখলেন বোধহয়। পেন্সিলের মাথা রাখলেন পোনাপে নামের দ্বীপটার ওপর। এটার উত্তরে—ঠিক কত দূরে বলতে পারব না ছোট একটা অ্যাটুল। আছে। কেউ থাকে না ওখানে। এত ছোট, ম্যাপে দেখানোরও প্রয়োজন বোধ করেনি। জাহাজ চলাচলের পথ থেকে দূরে, কাজেই নটিক্যাল চার্টেও দেখায়নি। নাম ছিল না। সুতরাং নাম একটা আমিই রেখেছি, পার্ল ল্যাগুন। ওই ল্যাগুনে গবেষণা চালিয়েছিলাম কিছুদিন।
পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর মুক্তা ফলানো হয় পারশিয়ান গালফ-এ। বছর পাচেক আগে ওই গালফ থেকে বিশ হাজার ঝিনুক সংগ্রহ করে পার্ল ল্যাগুনে নিয়ে যাই আমি, প্রাকৃতিক পরিবেশে ওই ঝিনুক থেকে কি-রকম মুক্তা হয় দেখার জন্যে। ওই ঝিনুকের জন্যে প্রচুর খাবারও নিয়ে যাই। পারশিয়ান গালফ-এর পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছি পার্ল ল্যাগুনে। আমার বিশ্বাস ছিল, ওখানেই ওই ঝিনুকের চাষ সফল হলে আরও অনেক জায়গায় করা সম্ভব হবে।
আমার পরীক্ষা সফল হয়েছে কিনা দেখার সময় হয়েছে এখন। সময়ের অভাবে যেতে পারছি না আমি, খরচ দিয়ে যে কাউকে পাঠাব, সে সামর্থ্যও নেই। তোমরা যখন ওদিকেই যাচ্ছ, পারলে একবার পার্ল ল্যাগুনে যেও, আমার ঝিনুক খেত থেকে কিছু নমুনা নিয়ে এস। তোমরা যেখানে যাবে, তার থেকে কিছুটা দূরেই হবে ল্যাগুনটা। তবে ওইটুকু যেতে আসতে যা খরচ লাগে, সেটা আমি দিতে পারব। পারবে যেতে?
শুনে তো ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে, কিশোর বলল। কিভাবে যেতে হবে? কি কি চিহ্ন দেখে বুঝব ওটা পার্ল ল্যান?
বলছি। এটাই আমার সিক্রেট। চারপাশে চোখ বোলালেন আবার। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন কিশোরের দিকে। কেউ শুনে ফেলছে না তো? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, শুনছে!
আমার অবশ্য তা মনে হচ্ছে না, হাসল কিশোর। তবে বলাও যায় না। যেভাবে জিনিসপত্র গাদাগাদি করে রেখেছেন, বাগ লুকানো থাকতেও পারে। খুঁজে বের করা মুশকিল। স্টাফ করা প্রাণীগুলো দেখাল। ওগুলোর কোনটার ভেতরও থাকতে পারে।
কিশোরের হাসিটা ফিরিয়ে দিতে দিতে চেয়ারে হেলান দিলেন প্রফেসর। যাকগে, অত ভেবে লাভ নেই। আমিও বোধহয় বেশি বেশি কল্পনা করছি। ভয় পাচ্ছি। ভয় পাওয়ার কারণও অবশ্য আছে। হুমকি দিয়ে উড়ো চিঠি আসা, রাতে ল্যাবরেটরিতে চোর ঢোকা.হ্যাঁ, কি যেন বললে? বাগ? এক ধরনের প্রেরক যন্ত্র, স্যার। স্পাইরা বলে বাগ।
অ। পুরানো ডিকটোগ্রাফের মত জিনিস। ওকথা আমিও ভেবেছি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি, পাইনি। থাকলে থাকবে, কি আর করা? যা যা বলেছি তোমাদের, সবই হয়ত শুনে ফেলেছে ব্যাটারা। শুনুর্ক। আসল কথাটা আর শুনতে দিচ্ছি না।
প্যাড থেকে একটানে ফড়ৎ করে একটা পাতা ছিঁড়ে নিয়ে পেন্সিল দিয়ে লিখলেনঃ নর্থ ল্যাটিচিউড ১১.৩৪। ইস্ট লংগিচিউড ১৫৮.১২।
কাগজটা ঠেলে দিলেন ছেলেদের দিকে।
এই প্রথম এটা লেখা হল, বললেন তিনি। এবং আশা করি এই শেষ। মুখস্থ করে নাও। এই অবস্থানে রয়েছে পার্ল ল্যাগুন। কখনও কোন কাগজে লিখবে না, কারও সামনে ঘুণাক্ষরেও উচ্চারণ করবে না।
একবার পড়েই মুখস্থ হয়ে গেল কিশোরের, অসাধারণ তার স্মৃতিশক্তি। কয়েক বার পড়ে রবিনেরও মুখস্থ হল। সময় লাগল মুসার। মনে মনে পড়েই চলেছেঃ উত্তরে ল্যাটিচিউড এগারো ডিগ্রি চৌত্রিশ মিনিট। পূর্বে লংগিচিউড একশো আটান্ন ডিগ্রি বারো মিনিট।
মুখস্থ হয়েছে কিনা, জিজ্ঞেস করলেন প্রফেসর। তিনজনেই মাথা ঝাঁকাতে কাগজটা টেনে নিয়ে উল্টোপিঠে একটা নকশা একে বোঝালেন, এই হল ল্যাগুন। এদিকটা উত্তর। এইখানে রয়েছে ঝিনুকের খেত। ল্যাগুনের উত্তর-পূর্ব কোণে পেন্সিলের মাথা রাখলেন তিনি। দেখে নাও ভাল করে।
নকশাটা মনে গেঁথে নিতে লাগল কিশোর।
হয়েছে? জিজ্ঞেস করলেন প্রফেসর।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
ম্যাচের কাঠি জ্বেলে কাগজটার এক কোণে আগুন ধরালেন প্রফেসর। পুড়ে ছাই হয়ে গেল পুরোটা কাগজ। সেটা হাতের তালুতে রেখে আঙুল দিয়ে টিপে টিপে মিহি গুঁড়ো করে ফেললেন। তারপর উঠে গিয়ে হাত ধুলেন বেসিনে। ছাইগুলো পানির সঙ্গে মিশে চলে গেল নর্দমায়।
প্রফেসরের বাড়ি থেকে বেরোল তিন গোয়েন্দা। বাইরে ইয়ার্ডের পুরানো ছোট ট্রাক নিয়ে অপেক্ষা করছে বোরিস। ওটাতে করেই এসেছে ছেলেরা।
ট্রাকে ওঠার সময় খেয়াল করল কিশোর, পাশের বাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এল একজন লোক। তার চেহারা দেখতে পেল না সে। মনে রাখার মত তেমন কোন বিশেষত্বও নেই শরীরের, শুধু পিঠ সামান্য কুঁজো হাঁটার কারণেও এমনটা হতে পারে। সোজা গিয়ে কালো একটা সেডান গাড়িতে উঠল লোকটা।
লোকটাকে লক্ষ্যই করত না কিশোর, যদি না প্রফেসরের সাবধানবাণী মন জুড়ে থাকত তার—ডেনজারাস! তিনবার মরতে মরতে বেঁচেছি…অত্যাচার করে তিলে তিলে মারা হবে তোমাদের-তার মনেও সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছেন প্রফেসর।
সারাটা পথ চুপ করে রইল কিশোর। একটা কথাও বলল না। স্যালভিজ ইয়ার্ডে পৌঁছল ট্রাক। মোড় নিয়ে গেটে ঢুকছে, এই সময় কালো সেডানটা চোখে পড়ল ওর, রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। অস্ফুট একটা শব্দ করে উঠল সে।
কি হল? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা।
উ! না, কিছু না, হাসল কিশোর। প্রফেসরের সন্দেহ রোগে আমাকেও ধরেছে। কালো একটা গাড়ি দেখলাম, কিন্তু তাতে কি? প্রশ্নটা যেন নিজেকেই করল সে। কালো সেডান আমেরিকায় অনেক আছে, রকি বীচেও।
মনকে বোঝানোর চেষ্টা করল বটে গোয়েন্দাপ্রধান, কিন্তু দুশ্চিন্তা দূর করতে পারল না। হয়ত ওদেরকে প্রফেসরের বাড়িতে ঢুকতে দেখেছে চোরদের কেউ, বেরোতে দেখেছে। ঘরে বাগ লুকিয়ে রেখে তাদের কথাও শুনেছে। আর তা হয়ে থাকলে, প্রফেসরের শত্রু এখন ওদেরও শত্রু হয়ে গেল। কালো গাড়িতে করে ট্রাকের পিছু পিছু এসে জেনে গেল, ওরা কোথায় থাকে।
এরপর কি করবে লোকটা? হয়ত…
দূর! কি আবোল-তাবল ভাবছে? এত হয়ত হয়ত করছে কেন? নিজেকে ধমক লাগাল কিশোর। মন থেকে সমস্ত সন্দেহ আর দুশ্চিন্তা ঝেড়ে বিদেয় করার চেষ্টা করল।