১. দেয়ালে ঝোলানো বিশাল একটা ম্যাপ

0 Comments

দেয়ালে ঝোলানো বিশাল একটা ম্যাপ দেখছিলেন মুসার বাবা রাফাত আমান, প্রশান্ত মহাসাগরের, শব্দ শুনে ফিরে তাকালেন।

ও, এসে গেছ, তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন তিনি। মাত্র আধ ঘন্টা আগে মুসাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছিলেন কিশোর আর রবিনকে, হাজির হয়ে গেছে। কোন রকম ভূমিকা না করে ছুঁড়ে দিলেন যেন প্রশ্নটা, দক্ষিণ সাগরে যেতে চাও?

বাবাআ! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। সত্যি বলছ!

মাথা ঝাঁকালেন রাফাত আমান। বললেন, আমাজান থেকে জন্তুজানোয়ার ধরে এনে ভালই কামিয়েছি, জানোই তো। আবার কিছু অর্ডার পাওয়া গেছে। ডেভিড লিসটারের নাম শুনেছ?

শুনেছি। ইস্পাতের ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন, কিশোর জবাব দিল।

কিন্তু লোহালক্কড় বাদ দিয়ে হঠাৎ জানোয়ার কেনার শখ হল কেন তার?

নিজের বাড়িতে একটা প্রাইভেট অ্যাকোয়ারিয়াম করেছেন। সাত সাগরের আজব আজব সব জীব এনে ওখানে জিয়াতে চান। আন্দাজ কর তো, কি কি চান?

সী লায়ন, রবিন বলল।

না। জায়ান্ট অক্টোপাস।

হাসি হাসি মুখটা নিমেষে গম্ভীর হয়ে গেল কিশোরের। তিরিশ ফুট লম্বা ওই দানব! কি করে ধরব? অসম্ভবকে সম্ভব করতে বলছেন তিনি।

শুধু তাই না, টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন রাফাত আমানু। প্যাডে পেন্সিল দিয়ে লিখে রেখেছেন নামগুলো। পড়লেন, একটা টাইগার শার্ক চান— বাঘা হাঙর। আরও চান একটা গারনারড, একটা এ্যাম্পাস, একটা সাগরের গিরগিটি, একটা ডুগং, একটা কংগার ইল—বিশাল বান মাছ, ছবি দেখেছ নিশ্চয়; দানবীয় ঝিনুক একটা চান, ওই যে, যেগুলো মানুষের পা আঁকড়ে ধরলে আর ছাড়ানোর সাধ্য হয় না, প্রায়ই ধরে ডুবুরিদের, অনেক ডুবুরি ছুটতে না পেরে ডুবে মারা যায়। একটা ম্যানটা বা সাগরের বাদুড়ও চান…

খাইছে! শুনেছি ওগুলো জেলেদের নৌকা ডুবিয়ে দেয়, হাঁ হয়ে গেছে মুসা। কিভাবে…

একটা সী সেন্টিপেড বা সাগরের শতপদী, বলে যাচ্ছেন রাফাত আমান, ছেলের কথা যেন কানেই যায়নি, একটা করাত মাছ, একটা তলোয়ার মাছ, একটা রাক্ষুসে স্কুইড…হ্যাঁ, যোগ করলেন তিনি। কিশোরের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে দেখে মজা পাচ্ছেন, খুদে যে জীবগুলো সচরাচর দেখ, ওগুলো নয়, চল্লিশ ফুট লম্বাগুলো, শুড়ের মাথায় বাসনের সমান বড় সাকশন কাপ থাকে, পনেরো ইঞ্চি লম্বা চোখ…ওগুলোর হারামিপনায় বিরক্ত হয়ে চমৎকার একটা নাম দিয়েছে। জেলেরা, প্রশান্ত মহাসাগরের দুঃস্বপ্ন।

ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেছে ছেলেরা। নিছক আনন্দ ভ্রমণে যাচ্ছে না। ওরা।

কিশোর জিজ্ঞেস করল, ধরতে তো পারব না, জানি। ধরা যাক, ধরলাম। এতগুলো দানবকে বাড়ি আনব কি করে?

একটা স্কুনার ভাড়া করবে, যেটাতে বড় বড় দুতিনটে ট্যাংক আঁটে। ধরে ধরে রাখবে ওগুলোতে। তারপর মালবাহী জাহাজে তুলে দেবে। চলে আসবে, আর কি।

দানব ধরার কথা ভুলে গিয়ে প্রায় নাচতে আরম্ভ করল মুসা। খুশিতে। আহ, কি মজা! নিজের জাহাজে পাল তুলে দিয়ে ভেসে পড়ব সাগরে…

অত খুশি হয়ো না, বাধা দিয়ে বললেন তার বাবা। ইয়ট নিয়ে যাচ্ছ না। একটা ফিশিং বোট ভাড়া করবে, মাঝিমাল্লা নেবে দক্ষ দেখে, সাগর আর মাছ ধরায় যাদের জ্ঞান আছে। লিসটারের অর্ডারগুলো তো ধরবেই, এ ছাড়াও বিচিত্র যা-ই দেখবে, ধরার চেষ্টা করবে, যেগুলোর চাহিদা আছে পাবলিক অ্যাকোয়ারিয়ামে।

জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন তিনি। চুপ করে কি ভাবলেন। আবার তাকালেন ছেলেদের দিকে। পারলে আমিও যেতাম, এতবড় একটা সুযোগ…কিন্তু উপায় নেই। হাতে অনেক কাজ। মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার একটা ছবি করছেন। আমাকে ছাড়তেই চান না, পারলে সারাক্ষণ আটকে রাখেন স্টুডিওতে।

আবার জানালার বাইরে তাকালেন তিনি।

কখন রওনা হচ্ছি আমরা? কিশোর জিজ্ঞেস করল।

যত তাড়াতাড়ি পার, বলে কিশোরের দিকে তাকালেন। আর হ্যাঁ, আজই গিয়ে একবার প্রফেসর এনথনি ইস্টউডের সঙ্গে দেখা কোরো। আগেই বলে রেখেছেন, ওদিকে যদি তোমাদের পাঠাই, তাকে যেন জানাই। তোমাদের কথা সব জানেন তিনি।…তাঁকে চেন?

চিনি, রবিন বলল।

গুড। একটা গোপন কাজ বোধহয় দেবেন তোমাদেরকে। মুক্তো-টুক্তোর ব্যাপারে কিছু হবে।

Categories: